Gg
গল্প: হারিয়ে যাওয়া আলোর শেষ ছোঁয়া
শীতের সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ঘরের বাইরে কুয়াশার আস্তরণ, বাতাসে হালকা ঠান্ডার আমেজ। ছোট্ট শহরটির এক কোণে, জানালার পাশে বসে আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে রূপা। তার চোখের গভীরে যেন অন্ধকারের ছায়া, বুকের ভেতর এক শূন্যতা।
আজ চার বছর হলো। চার বছর আগে ঠিক এই দিনে সে হারিয়েছে তার জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয়, সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে।
রূপা আর আদিত্য—দুই ভিন্ন জগতের মানুষ। রূপা শান্ত, ভদ্র, পরিবারের আদুরে মেয়ে। আর আদিত্য? সে ছিল স্বাধীনচেতা, উচ্ছল, নিজের মনের মতো চলতে ভালোবাসতো। দুজনের পরিচয়টা ছিল অদ্ভুত।
Video
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনেই ভুল করে রূপা আদিত্যর ক্লাসে গিয়ে বসেছিল। সবার হাসাহাসির মাঝে সে চুপচাপ উঠে যেতে চাইছিল, কিন্তু আদিত্য হেসে বলেছিল,
— "থাকো, আমি বরং তোমার জন্যই ক্লাসটা একটু ইন্টারেস্টিং করে দেব!"
Aiএর সাহায্যে নিউজ ভিডিও বানাতে নিচের পিকচার এর উপর ক্লিক করুন 👇
সেই কথার পর থেকেই যেন তাদের সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম।
রূপা কখনো ভাবেনি যে আদিত্যর মতো কেউ তার জীবনে আসবে। সে ছিল উচ্ছল, জীবনকে নিজের মতো করে উপভোগ করতো। তার সবকিছুতেই ছিল এক ধরনের বেপরোয়া সৌন্দর্য। আর এই বেপরোয়া জীবনযাপনই একদিন তাদের সম্পর্কের বাঁধন আলগা করে দিলো।
আদিত্য সবসময় চেয়েছিল স্বাধীন থাকতে, কোনো নিয়মের মধ্যে আটকে না পড়তে। কিন্তু রূপা? সে চেয়েছিল স্থিরতা, একরাশ ভালোবাসা আর নিরাপত্তা।
ক্লিক করুন 👇
তাদের মাঝে ঝগড়া হতো প্রায়ই।
— "তুমি কেন সবসময় আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাও, রূপা?"
— "আমি তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না, আদিত্য। আমি শুধু চাই তুমি একটু দায়িত্বশীল হও।"
— "জীবনটা এত কাঠিন্যের জন্য নয়, রূপা। আমি তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু নিজের মতো করে বাঁচতেও চাই।"
একদিন হঠাৎ করেই আদিত্য উধাও হয়ে গেল। ফোন বন্ধ, কোথাও খোঁজ নেই। রূপা প্রথমে ভেবেছিল হয়তো সাময়িক রাগের মাথায় চলে গেছে। কিন্তু দিন যেতে থাকল, মাস পেরিয়ে গেল, কোনো খোঁজ নেই।
তারপর একদিন একটা চিঠি এলো—
বোনাস নিন নিচের পিকচার এ ক্লিক করে 👇
"রূপা,
তুমি হয়তো ভাবছো, আমি কেন চলে গেলাম। আমি জানি, আমি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি। কিন্তু আমি জানি না, আমি কি আসলেই তোমার মতো একটা ভালো মেয়ের যোগ্য ছিলাম কিনা। তোমার শান্ত জীবন চাই, আর আমি অস্থিরতায় ভরা এক পাগল। তোমার চোখে আমি একদিন পড়ে থাকতে চাইনি। তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। ভালো থেকো, রূপা।"
চিঠিটা হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদেছিল রূপা।
তারপর কেটে গেল চার বছর।
এই চার বছরে রূপা নিজেকে বদলে ফেলেছে। সে এখন স্থির, শান্ত। কিন্তু তার হাসিটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। প্রতিদিন সে ভাবত, আদিত্য কি ভালো আছে? কোথায় আছে? সে কি সত্যিই সুখে আছে?
তবে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল সেদিন, যখন রূপা হঠাৎ একদিন কলেজের পুরনো লাইব্রেরিতে গিয়ে ঢুকল।
সেখানে একটা পুরনো ডায়েরি পড়ে ছিল, যার ভেতরে লেখা ছিল আদিত্যর শেষ কিছু কথা—
"রূপা,
আমি চলে গিয়েছিলাম কারণ আমি জানতাম, আমি বেশিদিন বাঁচব না। ডাক্তার বলেছিল, আমার হৃদযন্ত্রের সমস্যা আছে, আমি হয়তো বছর পাঁচেকের বেশি টিকতে পারব না। আমি জানতাম, একদিন যদি তুমি জানতে, তুমি ভেঙে পড়তে। তাই আমি চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে ঘৃণা করো, আমাকে ভুলে যাও। আমি চাইনি, আমার জন্য তোমার জীবন থমকে যাক।"
ডায়েরির শেষ পাতায় ছিল একটুখানি শুকনো গোলাপের পাপড়ি। আর নিচে ছোট করে লেখা—
"আমি তোমাকে ভালোবাসি, রূপা। সবসময়।"
রূপার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
চার বছর পর সে বুঝলো, আদিত্য চলে যায়নি তাকে ছেড়ে—বরং তার ভালোবাসার মধ্যে দিয়েই সে চিরকাল রয়ে গেছে।
অন্ধকার রাতে, রূপা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। চাঁদের আলো পড়ছিল তার মুখে। সে ধীরে ধীরে ডায়েরিটা বুকে চেপে ধরল।
— "তুমি আমাকে একা রেখে চলে গেছো, কিন্তু আমি জানি, তুমি আমার পাশেই আছো।"
রূপার ঠোঁটে একটুখানি হাসি এলো, হয়তো কষ্টের, হয়তো শান্তির।
কিন্তু একদম গভীর রাতে, সে এক মুহূর্তের জন্য অনুভব করল—তার পাশেই কেউ বসে আছে। কেউ আলতো করে তার কাঁধ ছুঁয়ে বলছে—
— "ভালো থেকো, রূপা। সবসময়।"
0 Comments